CLASS 11
HISTORY BROAD QUESTION
সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝো? এই সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লেখ?
প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইউরোপ সহ ভারতের অর্থনীতিতে কখনো কখনো বিশেষ ধরনের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল যেখানে কেন্দ্রীয় শক্তির অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির বিকাশ ঘটেছিল। এই কাঠামো সামন্ততন্ত্র নামে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে, যে বৈশিষ্ট্য গুলি ইতিহাসের কোন সময়কালকে মধ্যযুগ হিসেবে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে সেগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সামন্ততন্ত্র বা সামন্ত প্রথা।
ইংরেজি ফিউডালিজম কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো সামন্ততন্ত্র বা সামন্ত প্রথা । ফিউডালিজম কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ ফিওডালিজ থেকে। সাধারণভাবে সামন্ততন্ত্র বলতে কোন সরকারি ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পরিবর্তে স্থানীয় ভূস্বামীদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়ে থাকে।
সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য:-
ধ্রুপদী যুগে পশ্চিম ইউরোপে যে সামন্ততন্ত্রের বিকাশ ঘটে তাতে বিভিন্ন দেশের সামন্ত তান্ত্রিক কাঠামোগত কিছু নিজস্বতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশের সামন্ততান্তের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন-
১|স্থানীয় ভূস্বামীদের প্রাধান্য:- সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের সর্বত্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য স্থানীয় সামন্ত প্রভু বা ভূস্বামীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতো। আঞ্চলিক এই সামন্ত প্রভুরা নিজেদের স্থানীয় এলাকায় চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তারা যুদ্ধের সময় রাজাকে সেনা সরবরাহ করে সাহায্য করতেন। যার ফলে আঞ্চলিক সামন্ত প্রভুর ওপর কেন্দ্রীয় শক্তিকে নির্ভর হতে হত।
২|শোষিত কৃষক ও ভূমি দাস:- সামন্ত প্রভুদের দ্বারা কৃষক ও ভূমিদাসদের শোষণ করার বিষয়টি অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য ছিল বলে মার্ক ব্লখ মনে করেন। কৃষকরা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে তাদের সামন্ত প্রভুর কাছ থেকে কিসের জমি লাভ করত। এর বিনিময়ে কৃষকের উৎপাদন সামন্ত প্রভু ভোগ করতো। কৃষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর ও বেগার শ্রম শোষণ করে প্রভু তাদের নিঃস্ব করে দিত। ভূমি দাসদের ওপরেও শোষণের মাত্রা ছিল অত্যন্ত বেশি। তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের সামন্ততান্ত্রিক করের বোঝা চেপে বসেত।
৩|জমির গুরুত্ব:- সামন্ত প্রথায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জমি। জমির পরিমাণ এর দ্বারা কোন সামন্তপ্রভুর আভিজাত্য ও মর্যাদা বিচার করা হতো। যেই প্রভুর যত বেশি জমে থাকত সেই প্রভু তত বেশি মর্যাদা পেতেন। সামন্ত ব্যবস্থায় জমির গুরুত্ব ছিল ব্যাপক।
৪| ম্যানর ব্যবস্থা:- কাল মার্ক সামন্ততন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ম্যানর ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। সামন্ত প্রভুর অধীনস্ত কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলি ছিল সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদনের প্রধান ভিত্তি। এই গ্রামগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতো ম্যানর ব্যবস্থা।
৫|যোদ্ধা শ্রেণি:- সামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একটি সুসঙ্ঘবদ্ধ যোদ্ধা শ্রেণীর গঠন ও যোদ্ধাদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সামন্ততন্ত্রে বীরযোদ্ধাদের বলা হত নাইট।
৬|বেগার প্রথা:- সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন সামন্ত প্রভু তার কৃষিজমি ও খামারে বিনা পারিশ্রমিকে তার অধীনস্থ কৃষকদের বেগার খাটাতে বাধ্য করতেন। দুর্যোগের সময় কৃষককে তার নিজের জমির ফসল রক্ষা করার পরিবর্তে প্রভুর জমির ফসল রক্ষা করতে বাধ্যতামূলকভাবে বেগার শ্রম দিতে হতো।
৭|অনুন্নত ব্যবস্থা:-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃষি প্রযুক্তি, শ্রম বিভাজন নীতি প্রভৃতি সবই নিম্নমানের ছিল বলে ঐতিহাসিক মরিস ডব উল্লেখ করেছেন। তার মতে এই অনুন্নত ব্যবস্থার কারণে কৃষি জমির আয়তন ও কৃষকের বিপুল সংখ্যার অনুপাতে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট কম হতো। অবশ্য এই স্বল্প উৎপাদনই তৎকালীন মানুষের চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল। কেননা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন হতো প্রধানত গ্রামীণ সমাজের ভোগের প্রয়োজনেই।
আরো পড়ুন:- পলিস বা নগর রাষ্ট্র কি? পলিসের বৈশিষ্ট্য লেখ? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন