Click Below

Breaking

Know more

Search

বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২

কঙ্গ সংকট (History) || কঙ্গ সংকটে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভূমিকা লেখ?



প্রশ্ন, 

কঙ্গ সংকট সম্পর্কে আলোচনা কর?

Or

কঙ্গ সংকটে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভূমিকা লেখ? 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যে আন্তর্জাতিক ঘটনা পৃথিবীতে উত্তাল করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের কঙ্গো সমস্যা। কঙ্গো ছিল বেলজিয়ামের উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় আফ্রিকা মহাদেশটিতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ১৯৯৮ এর ডিসেম্বর আত্রায় প্ল্যান আফ্রিকান সম্মেলন বসেছিল তাতে আফ্রিকা থেকে উপনিবেশবাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছিল। কঙ্গোতে বেলজিয়াম শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা ঘটে। যার ফল হিসাবে লুমুম্বার নেতৃত্বে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে সূত্রপাত হয়। শেষ পর্যন্ত বেলজিয়াম সরকার ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ৩০ শে জানুয়ারি কঙ্গোকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে। কিন্তু স্বাধীন কঙ্গোর ঘোষণা কি হবে তা নিয়ে কঙ্গো স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানকারী নেতৃত্ব বর্গের সহায় আসেনি।


কঙ্গো স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা 'লুমুম্বা' - কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন। অন্যদিকে জোসেফ ফরমোজাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। তাকে সমর্থন করেছিলেন কাইসোর নেতা টিসেম্বো। যাই হোক কঙ্গো নির্বাচনে লুমুম্বা জয়ী হয় এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয় লুমুম্বা। রাষ্ট্রপতি হন জোসেফ কাসাবুভু। এই সরকার গঠিত হওয়ার কয়েকদিন পর কঙ্গোতে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কঙ্গো সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিরোধী হয়ে ওঠে। টিসেম্বো এই সময় স্বাধীনতা ঘোষণা করে গৃহযুদ্ধ বাড়িয়ে তোলে। কারণ টিসেম্বো এই সময় বেলজিয়াম সরকারের সহযোগিতা লাভ করে। সরকার টিসেম্বোকে কাজে লাগিয়ে কঙ্গো স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার চেষ্টা করেন এবং বেলজিয়াম নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির রক্ষার জন্য কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ করে। ইতিমধ্যে বেলজিয়াম বাহিনী কঙ্গো রাজধানী লিওপোল্ড ভিল দখল করেছিল এবং সেখানে তাদের অনুগত টিশেম্বোকে সব ধরনের সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ জুলাই কঙ্গো সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের আবেদন জানায় সোভিয়েত রাশিয়া বেলজিয়াম সরকারের নিন্দা ঘোষণা করে কঙ্গোকে পুনরায় পরাধীন করতে চাইছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চায় না কঙ্গো স্বাধীনতার পূর্ণ আস্বাদ লাভ করুক। 


সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কঙ্গো সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেছিল। জাতিপুঞ্জো কঙ্গো সংকটকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন কঙ্গো থেকে বেলজিয়াম বাহিনীকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। কঙ্গো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। তার কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কঙ্গোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। কঙ্গোর তামা, টিন, হিরে ও ইউরেনিয়াম দখলের চেষ্টা করেছিল দুই বৃহৎ রাষ্ট্র। এই কারণে কঙ্গো কে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডা যুদ্ধ নতুন রূপ ধারণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে সতর্ক করে ঘোষণা করে সোভিয়েত যদি কঙ্গোতে হস্তক্ষেপ করে তাহলে মার্কিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ সকল শাস্তি কে শান্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল।


জাতিপুঞ্জের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও তেমন উল্লেখযোগ্য সমাধান হয়নি। ঠিক এই সময় কঙ্গো দক্ষিণে অবস্থিত কাসাই কঙ্গো থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। টিসেম্বো কঙ্গোয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে - প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিল। নিরাপত্তা টিসেম্বোর হুমকিকে অগ্রাহ্য করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সেনা প্রবেশ করবে বেলজিয়ামের সেনাবাহিনীর অপসারণ করা হবে। ফ্রান্স ও ইতালি এই প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে।


নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তৎকালীন মহাসচিব নামে মাত্র কিছু সেনা কে কঙ্গোয় পাঠিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে মহাসচিব লুমুম্বার কোনো সাহায্য গ্রহণ করেনি। মহাসচিবের সঙ্গে স্বাভাবিক লুমুম্বার মন কষাকষিতে কঙ্গ সংকট আরো বেড়েছিল ‌। সোভিয়েত ও পোল্যান্ড মহাসচিবের কঙ্গ নীতিকে সমালোচনা করেনি।


ইতিমধ্যে কঙ্গোতে লুম্বার সঙ্গে কাসাবুভুর ক্ষমতা দ্বন্দ্ব শুরু হলে কঙ্গ পার্লামেন্ট লুমুম্বাকে সমর্থন করে। এতে কাসাবুভুর সমর্থনকারীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে শেষে গৃহযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমি শক্তিবর্গের মদত সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন মবুতু। তিনি দেশের নতুন সংবিধান রচনা করে ক্ষমতাচ্যুত লুমুম্বাকে গোপনে হত্যা করেন। যাইহোক এই ঘটনার পরবর্তী সময় প্রমাণ করেছিল মবুতুরের মত সমর নেতা কঙ্গ সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত নয়। কঙ্গোর পরবর্তী নির্বাচনে ১৯৬১ তে একটি নতুন সরকার গঠিত হয়, যা ১৯৬৪ পর্যন্ত টিকে ছিল। লুমুম্বার সমর্থক ও টিসেম্বোর নেতৃত্বে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিকল্পনা করেন। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ করার প্রয়াস সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গ্রহণ করেননি। কারণ এই আন্দোলনগুলির পশ্চাতে পশ্চিমে রাষ্ট্রগুলির ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু টিসেম্বো জাতিপুঞ্জ বাহিনীর চাপে কঙ্গ থেকে সমস্ত বিদেশী সেনা অপসারণ করেন। কঙ্গো সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৯৫২ সালে টিসেম্বোর সঙ্গে কঙ্গ সরকার আলোচনায় বসে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মহাসচিব প্রস্তাব দিয়েছিলেন কঙ্গোর খনি থেকে যে রাজস্ব সংগৃহীত হবে তা সমানভাবে ভাগ করা হবে এবং কঙ্গ কে সশ্বাসন দান করা হবে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে টিসেম্বো এই প্রস্তাব মেনে নেয়।


ইতিমধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষ দেখা দিলে রাজনীতিবিদরা কঙ্গ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ফলে কঙ্গ সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই টিসেম্বো নিজের স্বার্থে এই সমস্যা কে বাড়িয়েছিল। পুনরায় জাতিপুঞ্জ কঙ্গতে সেনা প্রেরণ করলে গৃহযুদ্ধ দমিত হয়নি। ১৯৬৪ তে নতুন করে টিসেম্বো কঙ্গোতে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং ১৯৬৪ তে পুনরায় মবুতু কঙ্গ সামরিক সরকার গঠন করে। আর ১৯৭৩ পর্যন্ত তিনি কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কঙ্গো এই সময় আটটি প্রদেশে বিভক্ত হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে কঙ্গোর নতুন রাজধানী হয় জাইরে। এক কথায় বলা হয় কঙ্গো ইউরোপের দেশ গুলির হাত থেকে স্বাধীনতা পেলেও তার অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ কঙ্গবাসীকে কখনো স্বাধীনতার স্বাদ পেতে দেইনি।


আরো পড়ুন:-লেনিনের নয়া অর্থনীতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা কর?  CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Click Here