নমস্কার, বন্ধুরা । কখনো এটা ভেবে দেখেছেন যে, দুনিয়ার অন্যতম একনায়কতন্ত্রের শক্তিশালী খ্যাতিনামা নেতা - "আডলফ হিটলার" , কোটি কোটি মানুষের ব্রেন ওয়াশ করে, যাতে ওই মানুষগুলি তার অন্ধ ভক্ততে পরিনত হয়। কিভাবে এই মানুষটি দুনিয়ার অন্যতম একজন শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠলেন ? তিনি এরজন্য কোন কৌশলগুলি অবলম্বন করেছিলেন ? এই সমস্ত কিছুই জেনে নেব আমরা আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরব এই লেখাটির মাধ্যমে আপনাদের সামনে, সেটা হলো - হিটলার "আলবার্ট আইনস্টাইনের" মতো নামিদাম বিজ্ঞানীর সঙ্গে কিভাবে আচরণ করেছিল !
গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল বলেছিলেন, সাধারণত তিন ভাবে মানুষকে বশে যায়। সেগুলি হল - ইথোস, লোগোস ও প্যাথোস। বর্তমানে আজকালকার দিনে এই জিনিসগুলি 'MBA' - এর "Advertisement course" -এ শেখানো হয়। আমি একটি টুথপেস্টের উদাহরণ নি, ধরে নিন আমাকে একটি টুথপেস্ট বিক্রয় করতে হবে।
' ইথোস ' (Ethos) এর অর্থ হলো - আমি আমার নিজের অথরিটি স্টাবলিশ করব, নিজের পয়েন্ট বানানোর জন্য। আমি বলব - এই টুথপেস্টটি আপনি কিনুন কেননা 90% ডেন্টিস্ট এই টুথপেস্ট টি কে সার্টিফাই করে যে এটা ভালো।
লোগোস (Logos) এর অর্থ হলো, আমি লজিক ব্যবহার করব এই টুথপেস্ট টি তৈরির জন্য। আমি তখন বলব আপনি এই টুথপেস্ট কিনুন কারণ এর মধ্যে ফ্লোরাইড রয়েছে আর ফ্লোরাইড আপনার দাঁতের মধ্যে ক্যাভিটির সঙ্গে লড়াই করে তাকে ধ্বংস করে।
প্যাথোস (Pathos) এর অর্থ হল আমি ইমোশন ব্যবহার করব আপনাকে এই জিনিসটি কেনার জন্য। যেমন ধরুন, এই টুথপেস্ট টি কিনুন এতে দেশের লবন ব্যবহার করা হয়েছে। এই কারণে আপনার গর্বিত অনুভব করা উচিত এই টুথপেস্ট টি ব্যবহার করার সময়। এখন বন্ধুরা বিষয়টি হলো এমন যে, যদি আপনি পান মসলার মত কোনো জিনিস বিক্রয় করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে কোনো লজিক্যাল মত আপনি রাখতে পারবেন না। তখন সেই সময় Advertisement companies- বিশেষ করে এই প্যাথোস (Pathos) ব্যবহার করে। যেমন -" বলো জুতা কেশোরী " , এই ধরনের স্লোগান গুলি কাস্টমারদের মনের মধ্যে প্রাইড ও হ্যাপিনেসের ফিলিংস আনে।
বন্ধুরা পলিটিক্সের কথা আলোচনা করতে গেলে আপনি এটা ধরে নিতে পারেন যে, একজন ডিক্টেটর (একনায়ক নেতা) পান মসলার মতনই হয়। একজন সাধারণ মানুষ যদি লজিক্যালি চিন্তাভাবনা করে, তাহলে কখনোই কোনো ডিক্টেটরকে (একনায়কতন্ত্র নেতাকে) ভোট দেবেন না। এই কারণে একজন ডিক্টেটরকে সবসময় প্যাথোস (Pathos) অর্থাৎ ইমোশনের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়, অন্যান্য মানুষের ভোট নেয়ার জন্য। যেমন-আপনি যদি আপনার দেশকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে ভোট দিন, আপনি যদি আপনার দেশের সৈনিকদের ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে ভোট দিন ইত্যাদি.. ইত্যাদি। প্রচুর পরিমাণে জনগণ প্রভাবিত হয় এই ধরনের ভাষণের উপর। কিন্তু, কোনো মানুষ যদি এটাকে লজিক্যালি ভেবে দেখে তাহলে সে মনে করবে - ঠিক আছে আমরা সৈনিকদের সম্মান করি ; কিন্তু এর মানে তো এটা নয় যে, তার জন্য আমরা ওই নেতাকে ভোট দেবো। এই কারণেই শুধুমাত্র প্যাথোস (Pathos) এর ব্যবহার যথেষ্ট নয় একজন মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য। এই জন্য একজন ডিক্টেটরকে যদি সত্যিই ডিক্টেটর হতে হয় তাহলে লজিককে পুরোপুরি শেষ করতে হবে। আর এরকমই কাজ করেছিলেন - হিটলার।
(10th May 1933) - 25 হাজারের বেশি বই পুড়িয়ে দেওয়া হয় " Nazi party " - দ্বারা। তারা বললেন এই বইগুলি অ্যান্টি ন্যাশনাল ও জার্মানের বিরুদ্ধে। আর এই বইগুলো ছিল - মার্কসেস লিটারেচার, সাইকোলজি, লিব্রালিজম ডেমোক্রেসি উপর কথা বলে সেই ধরনের বই। আরো এমন কিছু বই ছিল যেগুলি আর্টের উপর, বিদেশীদের উপর ছিল। বলতে গেলে সকল সেই ধরনের বই যেগুলি " Nazi party " মনে হতো যে, এটা আমাদের পার্টির বিরুদ্ধে কিংবা আমাদের ডিক্টেটরের বিরুদ্ধে যায় ; সকল সেই ধরনের বইগুলিকে তারা পুড়িয়ে দিতেন।
এই সময়ে এমন ধরনের আর্টিকেল লেখা হতো যা লজিককে পুরোপুরি নিচে নামিয়ে দিত। একটি ভারীমাত্রায় pseudo science-ও দেখা দিত এই ধরনের ভুয়ো আর্টিকেল গুলিতে। যেখানে এটা দেখানো হতো যে, আমরা যে সকল জার্মান মানুষেরা রয়েছি তারা প্রত্যেকেই উচ্চতর শ্রেণীর। আমাদের মধ্যে যে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে তা খুবই পিওর। আর আমরা ছাড়া অন্যান্য যে সকল মানুষ রয়েছে তারা সকলেই সাধারণ শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। যারা আমাদের থেকে অনেকটাই নিচু শ্রেণীর।
একজন তথাকথিত উদ্ভাবক ছিল অস্ট্রিয়াতে, যার নাম ছিল " হান্স হড়বিগার " যে একদিন চাঁদ কে দেখে এবং সে রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে যে, চাঁদ হয়তো বরফ দিয়ে তৈরি। কারণ দেখতে একটি সাদা রংয়ের। তখন সে বলল, এই পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বরফ দিয়ে তৈরি । এরপর সে তার নিজস্ব একটি তত্ত্ব বা মতবাদ প্রকাশ করে। সেই তত্ত্বের নাম দেন -" world ice theory ". এটা শুনতে লজিক্যলি এতটা না বাচক হওয়া সত্বেও হিটলারের মতো নামিদামি ডিক্টেটর এই জিনিসটিকে প্রমোট করে, যে পুরো দুনিয়া বরফ দিয়ে তৈরি। Nazi party- এই তথাকথিত উদ্ভাবক কে ডক্টরের উপাধিও দেয়। এমত অবস্থায় দেশে যে সকল বুদ্ধিজীবী মানুষেরা ছিলেন - প্রফেসর, সাইন্টিস্ট, ডক্টর তাদের সকলের বক্তব্যকে দাবানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি ও কলেজ এমন দেশের একটি জায়গা ছিল যেখানে সব থেকে বেশি লজিকের উপর কথা বলা হত। এই কারণে ইউনিভারসিটির উপর একটি টাইট কন্ট্রোল বসানো হতো ' Nazi party ' দ্বারা। আর তাও আবার এতটা পর্যন্ত যে, যে সমস্ত উচ্চ মানের ইউনিভার্সিটি ছিল তাদের প্রত্যেকটির মুখ্য অধ্যক্ষ (principle) গুলি কে এক একটি করে বাছাই করা হতো Nazi party দ্বারা। আর যেই বিষয়গুলি পড়ানো হতো, এই ইউনিভার্সিটিগুলিতে তাদের উপর করা নজর রাখা হতো। Nazi party - সব সময় এটা চাইতে যে তাদের চিন্তাধারা যেন ছাত্রদেরকে পড়ানো হয়। আর যদি এমনটা কোন ইউনিভার্সিটিতে না করা হয় তাহলে সেই ইউনিভার্সিটির প্রফেসর গুলোকে বার করে দেয়া হবে। তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হবে। এমন অবস্থায় খুব কম অধ্যক্ষ ছিলেন যারা সাহস করে এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারতেন। কিন্তু, এমন একটি বিরল দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ পাওয়া যায়, যে এর সমর্থন একেবারেই করতেন না। আর তিনি হলেন আলবার্ট আইনস্টাইন।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন শুরু থেকেই খোলাখুলি ভাবে সমালোচনা করেছিলেন হিটলারের পার্টিকে। এমনকি হিটলার ক্ষমতায় আসার পর 'আলবার্ট আইনস্টাইন' - হিটলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিজে ইস্থাফা দিয়ে দেন। শুধু তাই নয় অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এও উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি এই জার্মান দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান। তিনি জার্মান দেশের নাগরিকত্বও ছাড়তে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমার এরকম দেশের নাগরিকত্ব একেবারেই চাই না, যেখানে কারো সমান অধিকার নেই।
এই সময়ই জার্মানির যে বিকৃত হলুদ সাংবাদিকরা ছিল তারা তাদের ইচ্ছামত ভুলভাল খবর ছাপতে শুরু করে আইনস্টাইনের বিরুদ্ধে। আইনস্টাইন কে নিয়ে তারা তাদের খবরের কাগজগুলিতে একাধিক কার্টুন বানাতে শুরু করে এবং আইনস্টাইনকে তারা একটি মজার খোরাকে পরিণত করে। আবার কিছু খবরের কাগজ তো এটাও বলতে শুরু করে দিয়েছিল যে, আইনস্টাইন কমিউনিস্টদের সাথে মিশে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে শুরু করেছে। এই সকল সাংবাদিক ও খবরের কাগজ গুলি মিলে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে দেশের প্রধান শত্রু রূপে দেখাতে শুরু করেছিল। যেমন ধরুন আলবার্ট আইনস্টাইনই সেই সময়ের সব থেকে বড় দেশ দ্রোহী। Nazi party- মুখ্য প্রচারক " Mr Joseph Goebbels " - একটি আইনস্টাইনের ফটো দেখান এবং যার উপরে তিনি টাইটেল হিসেবে লেখেন " Not yet Hanged " অর্থাৎ আইনস্টাইনের জীবনের উপরও বিপদ ঘনিয়ে পড়ে। এই কারণে আইনস্টাইন জার্মানি ছেড়ে বেলজিয়ামে চলে যান। সেখানে তিনি "Belgium royal family " - থেকে সিকিউরিটি পান। কারণ তাঁর জীবনের উপর খুবই বড়ো বিপদ ছিল।
(30th Aug 1933):- আইনস্টাইনের একজন দার্শনিক বন্ধু " Theeodor Leasing "- কে হত্যা করে দেওয়া হয় Nazi party দ্বারা। আর যেই মানুষরা তাকে হত্যা করে তাদের মালার পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। এই ঘটনার সাথে সাথেই খবরের কাগজে ছাপা হয় যে, এর পরের নাম্বার কি আইনস্টাইনের !? শুধু তাই নয় আইনস্টাইনের ওপর একটি মূল্যের পুরস্কার রাখা হয়। কেউ যদি আইনস্টাইনকে মেরে দিতে পারে তাহলে সে ওই মূল্যের পুরস্কারটি পাবে। তখন আইনস্টাইনকে বেলজিয়াম ছেড়ে ইংল্যান্ডে পালিয়ে যেতে হয়। যেখানে ২৪ ঘন্টা বডিগার্ড তার সঙ্গে থাকতেন। যাতে কোনো Nazi party- খবরি তাকে যেন মারতে না পারে। কিন্তু, সৌভাগ্যবশত এমনটা হয় না। আইনস্টাইন ইংল্যান্ডের একটি গ্রামে বসে তার "unified field theory"-লেখেন, যা আমরা আজকের দিনে আমাদের বইতে পরি। বন্ধুরা এই সম্পর্কিত লেখা আমরা অন্য আরেকটি লেখাতে আলোচনা করব।
পুনরায় আমাদের লেখাতে ফিরে আসলে আমরা দেখতে পাবো - হিটলারের একটি খুবই চর্চা মূলক কৌশল ছিল যে, জার্মানে বসবাসকারী সকল মানুষের মনে ভয় উৎপন্ন করো। সেটা কিভাবে? একটি মিথ্যা কার্টুন বা ক্যারেক্টার তৈরি করো যা কখনো ছিলই না। আর তার ভিত্তিতে সকল নাগরিকদের বলো যে, আমি তোমাদের এই শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করব। এইভাবে নিজে হিরো হয়ে যাও। এই ঘটনাতে বন্ধুরা, এই মনগড়া শত্রু ছিল- জিউস। চারিদিকে মিথ্যা খবর ছড়ানো হয় যে, জার্মানির প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারের কারণ ছিল - জিউস। জিউস-ই হলো দেশের অন্তর্গত প্রধান শত্রু, যে দেশকে ভিতর থেকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বিভিন্ন মনগড়া পোস্টার ছাপানো হয় যেগুলো দেখানো হয় যে, কিভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি হেরেছিল। আর এই সকলের জন্য দায়ী ছিল একমাত্র জিউস। যা ছিল পুরোপুরি একটি মিথ্যা কথা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কেননা জার্মান মিলেটারি তে সেই সময়ে এক হাজারের উপরে জিউস ব্যক্তি ছিল। ১২ হাজারের বেশি শহীদ হয়েছিল এই যুদ্ধে। যখন " Nazi party "- সোসালিজমের কথা বলতো তখন জিউস কে দোষ দেওয়া হতো capitalisam এর জন্য। যে দেখো জিউস সকল টাকা, ধন সম্পত্তি নিয়ে বসে রয়েছে নিজেদের সঙ্গে। এরপরে আসতে চলা বছর গুলিতে যখন Nazi party কর্পোরেটদের সাহায্য নিতে শুরু করে ও নিজে capitalism করতে শুরু করে, তখন জিউসকে দোষ দেয়া হয় কমিউনিজমের জন্য। অর্থাৎ capitalism ও communism এর জন্যে জিউসদের দোষ দেয়া হয়। আর শুধু তাই নয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হারার জন্য এদেরকে দোষ দেওয়া হয়, ইকোনমির নিচে যাওয়ার জন্যও এদেরকে দোষ দেওয়া হয়।
বন্ধুরা হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জার্মানির সাধারণ মানুষরা এগুলোকে কেন বিশ্বাস করে নিল ! এর পেছনে প্রথম কারণ ছিল সকল সাংবাদিকরা হিটলারের কাছে বিকৃত হয়েছিল। যে কারণে মানুষের কাছে অন্য কোনো মাধ্যম ছিল না, যার থেকে তারা সত্যি খবরটি জানতে পারবে। আর দ্বিতীয় কারণ এটা ছিল যে, বেকারত্ব অনেক বেশি ছিল। ইকোনমিক হাল খুবই খারাপ ছিল ও তখনকার মানুষরা ইউনিভার্সিটি গেলও তাদের পড়াশোনা করানো হতো Nazi party ইচ্ছা অনুযায়ী বিষয়ে। যেই কারণে তখনকার মানুষগুলি এই সমস্ত ভুয়ো বিষয়গুলি সব বিশ্বাস করে নিত।
হিটলারের পরবর্তী কৌশল ছিল নিজেকে একটি মুরুব্বির মতো দেখানো। এই জিনিসটি করার জন্য তিনি অনেক বক্তৃতা দেন, যাতে জার্মানির জনগণরা তার উপর আকৃষ্ট হয়। 1920 তে একটি বায়োগ্রাফি লেখা হয়েছিল হিটলারের উপর। যাতে হিটলার কে - জিসাসের (যীশু খ্রীষ্ট) সমতুল্য বলে মানা হয়েছিল। সেখানে লেখা হয়েছিল হিটলার হচ্ছে এমন একজন মানুষ যিনি সমগ্র জার্মানিকে বিপদমুক্ত করবেন। কিন্তু, পরবর্তীতে ধরা পড়ে যে এই বায়োগ্রাফি হিটলার নিজেই লেখানো করিয়েছিলেন। নিজেই নিজেকে যিশুখ্রিস্টের সমতুল্য বলে মেনে - সেই সম্পর্কিত বায়োগ্রাফি লেখানো হয়েছিল। এই বায়োগ্রাফির বইটি ছাপার সময় অন্য একজনের নাম দেয়া হয়। এই জিনিসটি পরবর্তীতে সামনে আসে এবং বোঝা যায় যে হিটলার নিজেই নিজের প্রশংসা করেছিলেন ওই লেখার মাধ্যমে। এই ঘটনা সামনে আসার দু বছর পর (18th July 1925) হিটলার নিজের অটোবায়োগ্রাফি লিখেছিলেন। সেখানে অনেক বড় বড় মিথ্যা কথা লেখা হয়েছিল। যেমন ধরুন নিজেকে বলা হয়েছিল - আমি কতটা গরীব পরিবার থেকে এসেছি, আমি খুবই কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি, আমি প্রথম দিকে একজন লেবার হিসেবে কাজ করেছি ইত্যাদি.. ইত্যাদি। কিন্তু, পরবর্তীতে ধরা পড়ে সেই সকল বিষয় মিথ্যা ছিল। শুধু তাই নয় সাংবাদিকরা তাকে একজন মুরুব্বির মতনই দেখাতো। 1930 সালে যে ইলেকশন লড়া হয়েছিল সেখানে ব্যালট কার্ডে 'নাজি পার্টি' লেখা হয়নি। এরা সেখানে হিটলার মুভমেন্টের নাম লিখেছিলেন। অর্থাৎ নিজেরই নাম লিখেছিলেন ব্যালট কার্ডে, যেখানে পার্টির নাম হওয়া উচিত ছিল। একটি প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঠবে সেটি হল - যদি এতগুলি মিডিয়াকে কিনতে হয় তাহলে টাকার প্রয়োজন তো পড়বেই ! তবে এই টাকা আসবে কোথা থেকে?
বন্ধুরা, এই কথাটি অর্ধেক সত্য। কেননা মিডিয়াকে নিজের পক্ষে আনার জন্য তাদের ভয় পাইয়ে ধমকানো যায়। এমনটা নয় যে শুধুমাত্র টাকা দিয়ে তাদের কিনতে হবে। কিছু কিছু সাংবাদিককে জেলে বন্দি করার ভয় দেখানো হতো এবং কিছু কিছু সাংবাদিককে টাকা দিয়েও রাজি করানো হতো। বন্ধুরা হিটলার যৌথ তহবিল থেকে টাকা যোগান পেতেন। অনেক মিলিত কর্পোরেট একত্রিত হয়ে হিটলারের টাকার জোগান মেটাতো। বর্তমানের অনেক নামিদামি জার্মান কোম্পানি সম্পর্কে আমরা জানি - Volkswagen, BMW, Kodak, Nestle, ford ইত্যাদি। এই সকল কোম্পানি হিটলার কে ফান্ডিং করেছিল। এর কিছুকাল পরেই খবর পাওয়া যায় যে, এই সকল কোম্পানি জনগণের চাপে এসে সেই সকল জিউস পরিবারদের কিছু পরিমাণ আর্থিক সাহায্য করে যারা হিটলারের হাত থেকে বেঁচে ছিলেন।
বন্ধুরা আপনারা কি জানেন ভারতেও কিছু মানুষ অনুপ্রাণিত ছিলেন হিটলারের উপর। একটি নাম যা সবার আগে উঠে আসে তা হল - Vinayak Damodar Savarkar , তিনি তার ভাষণে বলেন - " জার্মানি ও ইতালিতে নাজি পার্টির ছোঁয়া পাওয়ার ফলে যেই অদ্ভুত কৌশলে এই দুই দেশ উপরে উঠে এসেছে তা থেকে মনে হয় এই দুই দেশের স্বাস্থ্যের কল্যাণের জন্য এই টনিকেরই প্রয়োজন ছিল। "
যেমন, 'নাজি পার্টি' পিওর জার্মান দের কথা নিয়ে উল্লেখ করেছিলেন ঠিক সেরকমই 'দামোদর সভারকার'- সেই জায়গায় হিন্দুদের সম্পর্কে আলোচনা করেছে। তার মতে 'হিন্দুত্ব' একটি রাজনৈতিক চিন্তাধারার অন্তর্গত ছিল। যার মধ্যে হিন্দু, শিখ, জৈন ও বুদ্ধরা আসে। আর মুসলিম ও খ্রিস্টানরা ছিল - বহিরাগত। তিনি জিউসকে তুলনা করেছিলেন ভারতের মুসলমানদের সঙ্গে। আজকের দিনে কিছু মানুষ 'হিন্দুত্ব' শব্দটিকে বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু, যদি আপনি সেই হিন্দুত্বের কথা বলেন যেটির কথা সাভারকার বলেছিল যেখানে হিন্দুত্ব অর্থাৎ রাজনৈতিক চিন্তাধারা, তাহলে 'Hinduism' ও 'হিন্দুত্বের' মধ্যে একটি আকাশ পাতাল তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।
Hinduism - হলো এমন একটি চিন্তাধারা যা বাসুদেব কুটুম্বকমে (The world is a family) বিশ্বাস রাখে। তারা মনে করে এই পুরো দুনিয়া এক। অন্যদিকে হিন্দুত্বের ভাবনা শ্রেষ্ঠত্ব দেখায়। যে কিছু মানুষ নিচে রয়েছে ও কিছু মানুষ উপরে। কিছু মানুষ একটি গোলের অন্তর্গত ও কিছু মানুষ বহিরাগত, যারা বহিরাগত তারা নিচু শ্রেণি।
দামোদর সাভারকরের মত মুসলিম সম্প্রদায়েও বহু মানুষ ছিল যারা শ্রেষ্ঠত্বের ভাবনা দেখাতো। যেমন ধরুন চৌধুরী রহমত আলী যিনি চাইতেন মুসলমানের জন্য একটি আলাদা দেশ হোক। মুসলমান ওপরে রয়েছে, বাকি লোক নিচে রয়েছে। এই ধরনের বহু মানুষ আমরা বারবার ইতিহাসে লক্ষ্য করেছি।
ভারতে আর একজন এমন মানুষ ছিলেন যিনি সামনাসামনি বলেছিলেন তিনি কতটা পছন্দ করেন নাজি পার্টিকে। তার নাম ছিল M.S. Golwalkar , তিনি তার ভাষণে বলেন- " নিজের দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি বজায় রাখতে জার্মানি তার দেশের ইহুদিদের বিতাড়িত করেছিলেন, এমনটা করে জার্মানি পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। নিজের রাষ্ট্রের প্রতি নিজেদের গর্ব ও অধিকার কায়েম রাখা এখানে উত্তম রূপে প্রকাশিত হয়েছে।"
আর এটা কোনো এমন চিন্তাধারা নয়, যা ভারত ও জার্মানিতে শুধুমাত্র দেখা গিয়েছে। ইরানে অনেক ইরানিয়ান ডিক্টেটর (এক নায়ক) রয়েছে, যারা দেখিয়েছে যে, যে সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলি রয়েছে তারা আমাদের থেকে কতটা নিচু। শুধু ইরানে নয় পাকিস্তানের এমন টা করা হয়েছিল।
তো বন্ধুরা এই সকল গল্প কাহিনীগুলি যখন আপনারা শোনেন তখন একটি জিনিস সবসময় মনে রাখবেন - সব সময় লজিক্যালি চিন্তাভাবনা করে দেখবেন। লজিক কে সবসময় উপরে রাখবেন প্যাথোস ও ফিলিংসের থেকে। আর যেমনটা ডক্টর আম্বেদকর বলেছিলেন - যেটা ধর্মের উপর ভক্তি রয়েছে তা আত্মার মুক্তির পথ হতে পারে। কিন্তু, রাজনীতিতে ভক্তি একটি সহজ রাস্তা পতনের দিকে যাওয়ার। কখনো কোনো পার্টির, কোনো মানুষের অন্ধভক্ত হবেন না। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন