Click Below

Breaking

Know more

Search

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

চীনের ক্যান্টন বাণিজ্য - বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব এবং অবসানের কারণ

 উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 

তৃতীয় অধ্যায় : ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি

গুরুত্বপূর্ণ ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর




প্রশ্ন : ক্যান্টন বাণিজ্য কি? ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য তথা পরিচয় দাও। ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসান এর কারণ লেখ।


উত্তর : ক্যান্টন বাণিজ্য :

চীনের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত ক্যান্টন বন্দর তাং যুগ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল এবং আধুনিক যুগেও এই বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে নানকিং এর সন্ধি আগে পর্যন্ত সমগ্র চীন বিদেশীদের কাছে রুদ্ধ থাকলেও একমাত্র এই ক্যান্টন বন্দর ছিল বিদেশিদের কাছে উন্মুক্ত বন্দর। চিনা আদালত ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে এক নির্দেশ নামা দ্বারা একমাত্র ক্যান্টন বন্দর কেই বিদেশি বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত বলে ঘোষণা করে। এইভাবে ক্যান্টন বন্দর কে কেন্দ্র করে চিনে বিদেশিদের এক বন্দর কেন্দ্রিক যে বাণিজ্য প্রথার সূচনা হয়, তা 'ক্যান্টন বাণিজ্য' প্রথা নামে পরিচিত।এই প্রথা ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে নানকিনের সন্ধি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রথম পর্বে পর্তুগিজরা ওপরে ব্রিটেনসহ অন্যান্য ইউরোপীয় জাতিগুলি নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।



ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য :

ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য গুলি ছিল তা নিম্নরূপ :-

১. ব্যক্তিগত বাণিজ্য :- কো হং নামে বণিক সংঘ দ্বারা পরিচালিত ক্যান্টন এর ছিল মূলত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাণিজ্য। এই জন্য চীনের সঙ্গে বিদেশী বণিকদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার দরকার হতো না।


২. রুদ্ধদ্বার নীতি: ক্যান্টন বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী বিদেশি বণিকদের চিনা ভাষা ও আদবকায়দা শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। তারা ক্যান্টনে চিনা ফৌজদারি ও বাণিজ্যিক আইন মেনে চলতে বাধ্য ছিল। বিদেশি বাণিজ্য কুঠিতে মহিলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ, দাসী নিয়ােগ প্রভৃতি নিষিদ্ধ ছিল। বাণিজ্যের মরশুম শেষে ক্যান্টনে আসা বিদেশি বণিকদের এই বন্দর ছেড়ে চলে যেতে হত। চিনে বিদেশি বণিকদের প্রতি এই কঠোর নীতি 'রুদ্ধদ্বার নীতি' নামে পরিচিত।



৩. মূল শহরে প্রবেশে বাধা: ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্য করতে আসা ইউরােপীয় বণিকরা শহরের প্রধান ফটকের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে। বসবাস ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চালাতে বাধ্য হত। বণিকরা ক্যান্টন শহরের প্রাচীরের বাইরে বাস করলেও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের রেখে আসতে হত ম্যাকাও-এ।


৪. কো-হং প্রথা: বিদেশি বণিকরা চিনের ক্যান্টন বন্দরে এসে স্বাধীনভাবে বা সরাসরি এখানকার বাণিজ্যে অংশ নিতে পারত না। কেন না, বিদেশি বণিকদের কোনাে অবস্থাতেই চিনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হত না বা অন্য যে-কোনাে বণিকদের কাছ থেকেও সস্তা দরে তাদের মাল কেনার অধিকার ছিল না। চিন সরকার একমাত্র 'কো-হং' নামক বণিকসংঘকে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছিল এবং বিদেশি বণিকরা ক্যান্টন বন্দরে একমাত্র কো-হং বণিকদের কাছ থেকেই মাল কিনতে বাধ্য ছিল।


৫. কো-হং-দের দুর্নীতি: ক্যান্টনের একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার পেয়ে কো-হং বণিকরা অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একচেটিয়া তারা চিনা রাজদরবার, আদালত ও শুল্ক অধিকর্তাকে বিপুল অর্থ উৎকোচ হিসেবে দিত। বাণিজ্যের বেশির ভাগ লভ্যাংশ কো-হং বণিকরা আত্মসাৎ করত।

৬. বাণিজ্যিক প্রাধান্য : ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রথমদিকে পর্তুগীজদের হটিয়ে ইংরেজ বণিকরা সর্বাধিক প্রাধান্য বিস্তার করে। পরবর্তীকালে আমেরিকার বণিকরা এই বাণিজ্যের যোগ দেয়। ক্যান্টন বন্দর কে কেন্দ্র করে যে সমস্ত দ্রব্যের বাণিজ্যিক প্রাধান্য দেয়া হয় সেগুলি হল চীনের চা, রেশম, মৃৎপাত্র, দারুচিনি, ঔষধ পত্র, পশম বস্ত্র, লোহা, টিন, পশুর লোম প্রভৃতি এই বাণিজ্যকে দেশীয় বাণিজ্য বলা হত। পরবর্তীতে আমেরিকা যোগ দিলে মুক্তবাণিজ্য কথা ঘোষণা করে।


ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসান :-

1] বাণিজ্যিক কার্যকলাপ বন্ধ: ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অন্তর্গত ইউরােপীয় দেশগুলির ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দূরীকরণের জন্য বিদেশি শক্তিসমূহ চিনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কস্থাপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু চিন বিদেশিদের প্রতি উদারনৈতিক বাণিজ্যিক অবস্থান গ্রহণ করেনি, বরং চিনের সাথে তাদের সবরকম বাণিজ্যিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানায়।


[2] আফিম যুদ্ধ: চিনের ক্যান্টন বাণিজ্যে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটেন আঠারাে শতক থেকে চিনে দূত পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু কেউই সফল হতে পারেননি। ব্রিটিশ বণিকরা উনিশ শতকের প্রথম থেকে ভারত থেকে চোরাপথে চিনে আফিম রপ্তানি করতে থাকে। ফলে ক্যান্টন বাণিজ্যের চরিত্র বদলাতে শুরু করে। আফিমের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের বিরােধের ফলে প্রথম আফিম যুদ্ধ বা প্রথম ইঙ্গ- চিন যুদ্ধ (১৮৩৯-৪২ খ্রি.) সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।


[3] অন্যান্য বন্দরের উত্থান: ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দের নানকিং চুক্তির ফলে নানকিং, সাংহাই, নিংপাে প্রভৃতি বন্দর বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্যান্টন বিদেশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তার একাধিপত্য হারায়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ক্যান্টন বাণিজ্য সাপিং দ্বীপে স্থানান্তরিত হয়। ইতিমধ্যে চিনের সাথে বিদেশি বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে হংকং এবং অন্যান্য উত্তরের বন্দরগুলি। এই বন্দরগুলি বেজিং এবং হােয়াংহাে নদী যা চিনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ, তার নিকটে অবস্থিত হওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অধিকাংশ বিদেশি শক্তি ক্যান্টন থেকে তাদের কার্যালয় হংকং-এ স্থানান্তরিত করে। এর ফলে ক্রমে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে।


 মূল্যায়ন :- ব্রিটিশ বণিকরা উনিশ শতকের প্রথম থেকে ভারত থেকে চোরাপথে চিনে আফিম রপ্তানি করতে থাকে। ফলে ক্যান্টন বাণিজ্যের চরিত্র বদলাতে শুরু করে। আফিমের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের বিরােধের ফলে প্রথম আফিম যুদ্ধ বা প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ (১৮৩৯-৪২ খ্রি.) সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। চিন ক্যান্টন-সহ বেশ কয়েকটি বন্দর বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Click Here