মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন
তৃতীয় অধ্যায়ঃ প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ
৪ নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন :- টীকা লেখ - তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ
অথবা ,
বারাসাত বিদ্রোহের বিবরণ দাও
অথবা বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব লেখ।
উত্তর :
সূচনা : ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তার নাম মীর নিসার আলী তিতুমীর এবং তার এই আন্দোলন ইতিহাসে বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।
বিদ্রোহের সূত্রপাত :
ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ , অত্যাচারী জমিদার নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিতুমীর বারাসাত বিদ্রোহের সূত্রপাত করেন। তিনি জমিদার ও নীলকরদের হাতে নির্যাতিত মুসলমানদের নিয়ে এক বিরাট বাহিনী গড়ে তোলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নেমে পড়েন।
নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা :
তিতুমীরের বাহিনীর সঙ্গে জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সংঘর্ষ বাধে। কৃষ্ণদেব রায়ের শাসন উচ্ছেদ ঘটিয়ে তিনি বারাসাত ও বসিরহাট এর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণা করেন। সেখানে নারকেলবেরিয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা তৈরি করে তার সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রধানমন্ত্রী হন মইনুদ্দিন এবং সেনাপতি হন গোলাম মাসুম। ইংরেজ শাসনকে নস্যাৎ করে তিনি 24 পরগনা, নদীয়া, ঢাকা, খুলনা, যশোহর, রাজশাহী, মালদা সহ বাংলার বিভিন্ন জেলার তার বারাসাত আন্দোলন প্রসারিত করেন।
পরাজয় :
শেষ পর্যন্ত জমিদার, নীলকর ও ইংরেজ কোম্পানির মিলিত বাহিনী ১৮৩১খ্রিস্টাব্দে তিতুমীরের বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং কামানের আঘাতে তিতুর বাঁশেরকেল্লা ধ্বংস করে দেয় । তিতুমীর এবং তার অনুগামী যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেন।
বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব :
তিতুমীরের এই বারাসাত বিদ্রোহ বা আন্দোলন ছিল জমিদার বিরোধী ও ব্রিটিশবিরোধী গণসংগ্রাম। তিনি এই আন্দোলন সংগঠিত করে বাংলার কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করেছিলেন, পাশাপাশি নিম্নবর্গের দরিদ্র মানুষেরা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। তবে তিতুমীরের আন্দোলন কিছুটা হলেও সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট ছিল। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক বিনয় ভূষণ চৌধুরী বলেছেন "এই বিদ্রোহ হল ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত এক কৃষক বিদ্রোহ।"তবে তার এই আন্দোলনে কিছু নিম্নবর্গের হিন্দু জমিদার ও ব্রিটিশদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন